আত্মা নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই৷ সেই প্রাচীন যুগ থেকেই অনন্ত রহস্যের আধার এই বিষয়টি। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে আত্মার। তাছাড়াও আছে প্রচলিত ও লোকায়ত নানা বিশ্বাস। আসুন আজ এসব নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক মুক্ত মনের আলোয়।
আত্মা কী?
সংক্ষেপে বলা যায় মানুষ ও অনান্য প্রানীর শরীরে থাকা যে অতিপ্রাকৃত শক্তি মানুষ তথা অন্য প্রানীর জীবিত থাকার জন্য দায়ী, তাই-ই হলো আত্মা। একটা জীবিত প্রানী নড়তে পারে, শব্দ করতে পারে, স্থানান্তরিত হতে পারে, যা একটা জড়বস্তু বা একটা মৃতদেহ পারে না৷ আস্তিকরা একেই নাম দিয়েছেন আত্মা। এমনকি উদ্ভিদের মধ্যেও আত্মা আছে, যদিও তাদের মধ্যে প্রানীর লক্ষনগুলো দেখা যায় না।
আত্মার অস্তিত্ব সত্যি আছে কিনা বা আত্মা সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলো কী বলেছে তা নিয়ে আলোচনায় ঢুকবার আগে একটু দেখে নি আত্মার উৎপত্তি মনুষ্যসমাজে কবে থেকে।
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে আত্মার ধারণা সংগঠিত ধর্মগুলির চেয়ে অনেক প্রাচীন। এমনকি তা ঈশ্বরবাদের আবির্ভাবের চেয়েও প্রাচীন৷ ঈশ্বরবিশ্বাস মানুষের মধ্যে অস্পষ্ট রূপে প্রথম আসতে শুরু করে নিয়ান্ডারথাল মানবের সময় থেকে, যা প্রায় পাঁচলক্ষ বছরের পুরানো৷ কিন্তু আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস আরো আগে। কত আগে? সে বিষয়ে সঠিক তথ্য আমরা কেউই জানি না৷ তবে পন্ডিতেরা বলছেন অন্তর তারো দশ হাজার বছরের পুরানো তো হবেই (এগুলো নিয়ে যদিও বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী তথ্য ও তত্ত্ব আছে)। সম্ভবত আদিম প্রাইমেট থেকে যখন 'বুদ্ধিমান' বিভিন্ন আদিম মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে শুরু করেছিলো, আত্মার কল্পনাও তখন থেকেই মানবসমাজে (যদি সেটাকে 'সমাজ' নাম দেওয়া যায়) শুরু হয়।
কোন ঘটনা মানুষকে সাহায্য করেছিলো আত্মার অস্তিত্বের কথা ভাবতে?
এ’ব্যাপারে দুটো জিনিসের কথা পন্ডিতরা তুলে ধরেছেন। এক, আদিম মানুষ লক্ষ করেছিলো জীবন্ত প্রানীর সাথে মৃত প্রানীর বা জড়বস্তুর পার্থক্য আছে। কিন্তু সেই পার্থক্য কিসের কারণে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার মতো উপায় তাদের মধ্যে ছিলো ন। ফলে তারা ধারণা করে নেয় 'অলৌকিক' কোনো শক্তিই এর পিছনে দায়ী৷ আর দ্বিতীয় কারণটি হলো স্বপ্ন৷ স্বপ্নে আদিম মানুষরা দেখতো তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন কাজ করছে যেগুলো তারা কখনো করে নি। ফলে তাদের ধারণা হয় দেহের মধ্যে কোনো শক্তিই এগুলোর জন্য দায়ী। ঘুমন্ত অবস্থায় সেই শক্তি শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে এসব কাজ করে আবার ঘুম ভাঙার আগে ফিরে আসে। এটাই হলো আত্মা প্রাথমিক ধারনা৷ কোনো কোনো পন্ডিত এর সাথে জুড়ে দিচ্ছেন রোগের ধারণাকেও। কেন বিভিন্ন রোগ হচ্ছে তা ব্যখ্যা করার উপায় আদিম মানুষের কাছে ছিলো না। ফলে তাদের ধারণা হয় বহিরাগত কোনো খারাপ শক্তি এসে তাদের শরীরের মধ্যের শক্তিটাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এইবকারণেই রোগবাগ হয়৷ রোগ সারাতে ওঝা ডাকার প্রচলন এই সময় থেকেই শুরু হয় আদিম মানুষের মধ্যে। আদিম বিভিন্ন গুহাচিত্রে অদ্ভুতুড়ে পোষাক পরে নৃত্যরত যেসব মানুষগুলোকে দেখেন, তারাই মানবসমাজের প্রথম ওঝা। ধর্ম বা পুরোহিতের আগমন তখনও হয় নি সমাজে।
আরো একটা কৌতুহলকর বিষয়, মানুষ এইসময় মনে করতো গাছপালা, নদীনালা, পাহাড়পর্বত, সূর্য চাঁদ প্রত্যেকেরই প্রান অর্থাৎ আত্মা আছে। তাই এসব প্রাকৃতিক শক্তিতে তুষ্ট করার জন্য, অর্থাৎ তাদের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য তারা এসব প্রাকৃতিক শক্তির পুজো করতো৷ মনে রাখবেন, হিন্দুদের প্রকৃতিবাদের সাথে এই বিশ্বাসের পার্থক্য আছে। হিন্দুরা বায়ুর দেবতা বলে মনে করে পবনদেবকে। জলের দেবতা বলে মনে করে বরুনকে। তাই হিন্দুরা ঠিক বায়ু বা জলকে পুজো করে না, করে এইসব প্রাকৃতিক শক্তি গুলোর দায়িত্বে থাকা দেবতাদের, অর্থাৎ পবন বা বরুণকে৷ কিন্তু আদিমমানুষেরা তা করত না। তারা সরাসরি এসব বায়ু বা জলকেই জীবন্ত প্রানী হিসাবে পুজো করতো (সম্ভব হলে ধর্ম ও জাদুবিশ্বাসের বিবর্তন নিয়ে পরে একদিন কলম ধরবো)।
এই গেলো আত্মার উদ্ভবের ইতিহাস৷ এবার আশা যাক আত্মা সম্পর্কে কোন ধর্মমত কী বলেছে।এবং এখান থেকেই গ্যাঁড়াকলের শুরু। কারো বর্ণনার সাথে কারো বর্ণনা মেলে না, অথচ সবাই মনে করে তার ধর্মের ব্যখ্যাটাই সঠিক। কেন সঠিক তার অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা নেই বিশ্বাসীদের কাছে। সঠিক, ব্যাস।
প্রথমে গীতার কথাতেই আসা যাক। গীতায় বলা হয়েছে
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়।
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা।
ন্যন্যনি সংযাতি নবানি দেহি।।
নৈনং শস্ত্রাণি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদায়মত্যাপো ন শোসষয়তি মারুতঃ।।
অচ্ছেদ্যহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশপষ্য এব চ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থানুরলচোহয়ং সনাতনঃ।।
অব্যক্তহয়মচিন্ত্যোহয়মবিকার্যোহয়মুচ্যতে।
তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমহর্সি।।
(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, ২/২২-২৫)
মানেটা কী দাঁড়ালো?
মানুষ যেমন ছিন্ন বস্ত্র ছেড়ে নতুন বস্ত্র পরে, আত্মা তেমমই পুরানো শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীরে প্রবেশ করে। এই আত্মাকে কোনো অস্ত্র দ্বারা কাটা যায় না, আগুন তাকে পোড়াতে পারে না, জল ভেজাতে পারে না, বাতাস শুকাতে পারে না। এ হলো শাশ্বত, স্থির ও সনাতন।
মৃত্যুর পর আত্মা তাহলে কোথায় যায়? প্রাচীন হিন্দুরা বিশ্বাস করতো মৃত্যুর পর ভালো আত্মার স্থান হয় ব্রহ্মলোকে, অর্থাৎ প্রজাপতি ব্রহ্মার রাজ্যে। আর খারাপ আত্মার স্থান হয় নরকে। পরবর্তীকালে হিন্দুদের মধ্যে এলো কর্মফল তত্ত্ব। হিন্দুরা বিশ্বাস করতে শুরু করলো মানুষের এ জীবনের কর্মফল অনুযায়ী পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হবে তার। অর্থাৎ ভালো কাজ করলে ব্রাহ্মণ জন্ম, খারাপ কাজ করলে বৈশ্য বা শূদ্র জন্ম, এবং আরো খারাপ কাজ করলে কীটপতঙ্গের জন্ম। প্রথমদিকে সমাজের অনুশাসন বজায় রাখতে, গোষ্ঠী জীবনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই কর্মফলবাদের উদ্ভব হয়৷ পরবর্তীকালে তাই হয়ে দাঁড়ায় শ্রেনী শোষনের অস্ত্র৷ জাতিভেদ প্রথা টিকিয়ে রাখার অস্ত্র। সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত শূদ্রদের মাথায় ঢোকানো হয় এ জীবনে তাদের উপর এত অত্যাচার, এত শোষণ নিপীড়নের কারণ তাদের পূর্বজন্মের কর্মফল। পূর্বজন্মে তারা অনেক পাপ করেছিলো, তারই শাস্তি হিসাবে এজন্মে শূদ্র হয়ে জন্মানো, এই অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়া৷ অতএব শূদ্রদের মাথায় ঢোকানো হলো হে শূদ্ররা, তোমরা তোমাদের উপর এই অমানবিক শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করো না৷ কারণ এই শোষন, এই অত্যাচার পূর্বনির্দষ্ট। তোমাদের গতজন্মের কর্মফল। এর প্রতিবাদ করলে তোমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করা হবে। ফলত পরের জন্মে আরো অবনতি হবে তোমাদের। কাজেই কোনো প্রতিবাদ না করে মেনে নাও এই অত্যাচার। তাতে পরের জন্মে ঈশ্বরের আশীর্বাদে ব্রাহ্মন বা ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেবে তুমি। ভোগ করবে অসীম সুখ ও ঐশ্বর্য (শূদ্রদের উপর অমানবিক অত্যাচারের বিভিন্ন শাস্ত্রীয় বিধান নিয়ে পরে একদিন লিখবো নাহয়)।
এভাবেই কর্মান্তরবাদ এদেশে জল ঢেলেছিলো বিদ্রোহের আগুনে। শোষিত শ্রেনীর প্রতিবাদের বর্শার অভিমুখ থেকে নিরাপদ রেখেছিলো শোষক সমাজকে। আর এইকারণেই পৃথিবীর অনান্য দেশে দাসবিদ্রোহ ঘটলেও আধ্যাত্মিকতার পূন্যভুমি এই ভারতে কোনোদিন ঘটে নি কোনো শূদ্র বিদ্রোহ৷ নিশ্চিন্ত নিরাপদে পাঁচ হাজার বছর ধরে অত্যাচার চালিয়ে গেছে উচ্চবর্ণের লোকেরা।
হিন্দুদের উপনিষদ বারোটি। মোটামুটি খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৪০০ অব্দে রচনা হয় এগুলি৷ ভগবদ গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে যেসমস্ত উপদেশ দিয়েছিলেন তার অনেকগুলিই কঠ উপনিষদ থেকে নেওয়া৷ কারণ গীতা অনেক পরের রচনা৷ কঠ উপনিষদে আছে যম ও নচিকেতার কাহিনী। নচিকেতা যমের কাছে আত্মার বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুক্ষন অরাজী থাকার পর যম নচিকেতাকে আত্মার অবিনশ্বরতা বিষয়ে জ্ঞান দেন। রথের উদাহরণ দিয়ে সেখানে আত্মার বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করা হয়। বলা হয়েছে শরীর রথ, আত্মা রথী, ইন্দ্রিয়গুলি অশ্ব, মন রশি, বুদ্ধি তার সারথি৷
বৃহদারণ্য উপনিষদে বলা হয়েছে 'মনো বৈ ব্রহ্মোতি অমনসো হি কি সাৎ?' (৪/১/৬), অর্থাৎ মনই ব্রহ্মা, মন হীনের কি সিদ্ধ হতে পারে?
মৈত্রী উপনিষদে বলা হয়েছে 'যিনি শুদ্ধ...শান্ত...শাশ্বত, অজাত...তার দ্বারাই এই শরীর চেতন রূপে থাকে। অর্থাৎ আত্মার শুধু শাশ্বতই নয়, আত্মার দ্বারাই চেতনার উৎপত্তি।
ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের আটান্ন সুক্তে আছে
যত্তে যমং বৈবস্বতং মনো জগাম দূরকম।
তত্ত আ বর্তয়ামসী হ ক্ষয়ায় জীবসে।।
যত্তে দিবং যৎ পৃথিবীং মনো জগাম দূরকম।
তত্ত্ব আ বর্তমায়সী ক্ষয়ায় জোবসে।।
অর্থাৎ, তোমার যে মন অতিদূরে বিবস্বনের পুত্র যমের নিকট তাকে আমরা ফিরিয়ে আনছি। জীবিত হয়ে ইহলোকে বাস করো।
তোমার যে মন অতিদূরে স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে চলে গিয়েছে, তাকে আমরা ফিরিয়ে আনছি। তুমি জীবিত হয়ে ইহলোকে বাস করো।
বলাই বাহুল্য, এখানে মন ও আত্মা সমার্থক।
সাংখ্যমতে 'আত্মা চৈতন্যস্বরূপ' (সাংখ্যসূত্র ৫/৬৯ ও সাংখ্যপ্রবচনভাষ্য ২/৪২/৪৭)।
আচার্য শংকর তার ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে বলেছেন 'মন হলো আত্মার উপাধিস্বরূপ।
শ্রীভাষ্যকার রামানুজের মতে 'আত্মা চৈতন্যস্বরূপ'।
শাক্ত দর্শনে বলা হয়েছে 'মন অন্য নয়, আত্মাই মন' (ত্রিপুরারহস্যতন্ত্র ১৭/১১৭, ৪৭)
যোগবাশিষ্ঠরামায়নে বলা হয়েছে 'স্বপ্রকাশ চৈতন্যস্বরূপ আত্মাই যখন মননশক্তি ধারণ করে, তখন মন বলে অবহিত হয়', অর্থাৎ চৈতন্য বা মনই আত্মা (যোগবাশিষ্ঠ রায়ন, উৎপত্তিপ্রকরণ, ১০০/১৪)।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে 'চৈতন্য বা চেতনাই আত্মা' (বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র, অখন্ড সং- প্রকাশক নবপত্র, পৃষ্ঠা ১৬২)।
কি মাথা ঘুরছে এতরকম মতবাদ পড়ে? দাঁড়ান বন্ধু। এ তো সবে কলির সন্ধ্যা৷ শুধু তো হিন্দুধর্মে আত্মার বর্ণনা দিতেই কেটে গেলো এতটা সময়৷ এরপর আসবে মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও অনান্য আদিবাসী ধর্মের আত্মার বিভিন্ন বর্ণনা। দেখবেন একের সাথে অন্যের কেমন আকাশ পাতাল পার্থক্য। কারো সাথে কারো বক্তব্য মেলে না। এ যায় ডানদিকে তো ও যায় বামে। অথচ অদ্ভুতভাবে সবাই বিশ্বাস করে তার ধর্মের বক্তব্যই একমাত্র সঠিক, বাকি সব মিথ্যা৷ কেন মিথ্যা, কিভাবে মিথ্যা, কিভাবে জানা গেলো আপনার ধর্মের আত্মার বর্ণনাটাই ঠিক, অনান্য গুলো মিথ্যা, প্রমান করতে পারবেন অনান্য ধর্মের আত্মার বর্ণনা ভুল, ঠিক শুধু। আপনারটি? ইত্যাদি প্রশ্ন করবেন না৷ কারণ এর কোনো উত্তর ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে নেই। অথচ এতরকম মতবাদ একইসাথে সত্য হতে পারে না। হয় যেকোনো একটি সত্যি, আর নয়তো সবগুলিই মিথ্যা৷ কোনটা সত্যি তা প্রমান করার দায় তো আস্তিক ও ধর্মগুরুদের। আমরা শুধু মজা দেখবো। যাই হোক, হিন্দুধর্মের আত্মার বিভিন্ন বর্ণনা তো পড়লেন। এবার একটু যাওয়া যাক অন্য দিকে। দেখা যাক বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় ও অনান্য বিভিন্ন ধর্মে আত্মার বিষয়ে কী বলা হয়েছে। প্রথমেই আসি আদিবাসীদের আত্মা সম্পর্কিত বিশ্বাসে। এখানেও বারো গেরস্তর তেরো হাঁড়ি। অর্থাৎ কারো ধারণার সাথে কারো ধারণা মেলে না। অথচ প্রত্যেকেই আবার মনে করে তার ধর্মের বা তার কমিউনিটির বিশ্বাসটাই একমাত্র সত্য, বাকি সব মিথ্যা
ছোটনাগপুর ও মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের ধারণা মানুষের ছায়াই হলো তার আত্মা।
কুকি ও মণিপুরের পুরুম সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের বিশ্বাস প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি করে আত্মা।
বীরহোররা মনে করে প্রতিটি মানুষের মধ্যে আছে তিনটি করে আত্মা। তার মিধ্যে একটাকে প্রায়ই দেখা যায়, তা হলো মানুষের ছায়া।
নীলগিরির টোডা সম্প্রদায়ের মানুষের মতে মানুষের আত্মা ঠিক তার মতই দেখতে।
মালয়ের মানুষের বিশ্বাস আত্মার রঙ লাল। আয়তনে তা ভুট্টার দানার মতো।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীর ধারণা আত্মা তরল।
অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা বিশ্বাস করে আত্মা থাকে বুকের বামদিকে। আয়তনে খুব ছোট্ট।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো প্রতিটি মানুষের মধ্যে হাত পা ও অনান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে একটা ছোট্ট মানুষ বাস করে৷ এটাই হলো তার আত্মা।
জাপানীরা বিশ্বাস করে আত্মার রঙ কালো।
চলুন এবার যাই বিদেশের দিকে বা অনান্য ধর্মগুলির দিকে। ইহুদীরা মনে করে প্রাণই আত্মা, আত্মাই প্রাণ৷ তারা বিশ্বাস করে জিহোবা মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণময় আত্মার সঞ্চার করেছিলেন। তাদের বিশ্বাস আত্মা থাকে হৃদপিন্ডে। সেখান থেকেই শক্তি সঞ্চারিত হয় সারাদেহে৷ হৃদপিন্ডই থেকেই উৎসারিত হয় চিন্তা, চেতনা, প্রেম, আনন্দ ইত্যাদি (বাস্তবে রক্তসঞ্চালন করা ছাড়া হৃদপিন্ডের কোনো ভূমিকা নেই। চিন্তা চেতনা উৎসারিত হয় মস্তিষ্ক থেকে। এসব গাঁজাখুরি তত্ত্বে বিশ্বাস করবেন না)।
হোমারের সময় ও তার পরবর্তীকালে গ্রীকরা বিশ্বাস করতো শ্বাসই আত্মা। মারা গেলে শ্বাস দেহ থেকে বিচ্যুত হয়৷ তবে মৃতদেহ যতক্ষন রক্ষিত থাকবে ততক্ষন আত্মা থাকবে মৃতদেহেই। মৃতদেহের সৎকার করার পর আত্মা বাতাসের সাথে মিশে যাবে।
ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্মে আত্মার বর্ণনা মোটামুটি একই। আত্মা এখানে দেহাতীত একটি স্বত্তা। এবং মৃত্যুর পরে আত্মা বেহেস্তে (স্বর্গ) বা দোজখে (নরকে) যায় এবং শেষ বিচারের দিন অবধি সেখানে অনন্ত সুখ বা অনন্ত দুঃখ ভোগ করে। হিন্দুধর্মের মতো পুনর্জন্মের তত্ত্বে বিশ্বাসী নয় এই দুই ধর্ম। খ্রীষ্টানরা আবার ভালো আত্মা ও দুষ্ট আত্মা এই দুইপ্রকার আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে।
আত্মা নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও উপজাতির পরস্পরবিরোধী মতামতগুলো দেখলেন। এবার দেখা যাক সত্যিই আত্মার অস্তিত্ব আছে কিনা সেই প্রশ্নে।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে আত্মা বলতে তাকেই বলা হয়েছে, যে শক্তি আমাদের দেহকে পরিচালনা করে, যা মৃতদেহ বা জড়বস্তু থেকে জীবিত প্রানীকে পৃথক করে। ধর্মগ্রন্থের মতে আমাদের চিন্তা চেতনার উৎস হলো আত্মা। আত্মার কারণেই আমরা চিন্তা করতে পারি, কোনো বিষয়ে ভাবতে পারি, শরীরের নানা মুভমেন্ট, চলন, গমন, বাক নির্গমন করতে পারি ইত্যাদি। অর্থাৎ খুব সোজা কথায় বললে, মনই হলো আত্মা। এখন মন কী? মানুষের শরীর কুচিকুচি করে কাটলেও কিন্তু 'মন' বলে কোনো অঙ্গ দেখা যাবে না। তাহলে আমরা চিন্তাভাবনা করছি কী করে? কী করেই বা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নানা নির্দেশ দিচ্ছি? আসলে পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে মস্তিষ্ক থেকে। মস্তিষ্কের অত্যন্ত জটিল বিভিন্ন কার্যপ্রনালী, অসংখ্য স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ককোষের জটিল সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সুসংহত সিস্টেম আমাদের সাহায্য করছে কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নানা নির্দেশ দিতে৷ কিন্তু প্রাচীন মানুষের কাছে আজকের বিজ্ঞানের এই গবেষনালব্ধ জ্ঞানগুলি ছিলো অজানা। মানবশরীরের বিভিন্ন রহস্যও তাদের জানা ছিলো না৷ জানা ছিলো না স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক কোষের অস্তিত্বের কথা, যার সাহায্যে আমরা চিন্তাভাবনা করতে পারি। প্রান ছিলো তাই তাদের কাছে রহস্যময় একটি বিষয়। ফলে তারা মনে করতো আমাদের শরীরে নিশ্চয়ই এমন কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তা আছে যার ফলে আমরা চিন্তাভাবনা করতে পারি, নানারকম অঙ্গসঞ্চালন করতে পারি। কিন্তু আজ আমরা জানি এরকম কোনো সত্ত্বার অস্তিত্ব নয়, মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের নানা জটিল ক্রিয়াকলাপই আমাদের চিন্তা চেতনা ও অনান্য ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী। জড়বস্তুর মধ্যে এই মস্তিষ্ক বলে বিষয়টি নেই, নেই অনান্য ক্রিয়াকর্মের উপযোগী অঙ্গপ্রত্যঙ্গও৷ তাই জড়বস্তুর মধ্যে প্রাণের লক্ষনও দেখা যায় না। এটাই মূল ব্যাপার। কোনো অতিপ্রাকৃত স্বত্তাকে এর মধ্যে টেনে আনার দরকার নেই। আবার প্রানীদেহের মৃত্যুর সাথে সাথে তার মধ্যে প্রানের বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষেরও মৃত্যু ঘটে৷ তারপর তা পোড়ানো হয় আগুনে বা কবর দেওয়া হয় মাটিতে। অর্থাৎ তথাকথিত 'মন'কে হয় আগুনে পোড়ানো হয়, নয় মাটির সাথে মেশানো হয়। এরপর মনের আর কোনো অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মনের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় মানে সম্ভব নয় আত্মার অস্তিত্ব থাকাও।
প্রশ্ন উঠবে তাহলে মৃত মানুষের মধ্যে প্রাণের লক্ষন দেখা যায় না কেন৷ তারও তো সমস্ত স্নায়ুকোষ, সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে। সোজা উত্তর, শুধু বিভিন্ন অর্গানগুলি থাকলেই হবে না, সেগুলিকে সচল রাখার শক্তি থাকতে হবে৷ নয়তো প্রাণের লক্ষণ তার মধ্যে থাকবে না৷ ঠিক যেমন একটা ফ্যানের সমস্ত পার্টস ঠিকঠাক থাকলেও ইলেকট্রিসিটি না থাকলে ফ্যান চলবে না ঠিক তেমনই।
প্রশ্ন উঠবে ফ্যানের ঘুর্ননের জন্য যে শক্তি দরকার তা আসে ইলেকট্রিসিটি থেকে৷ কিন্তু মানুষের মধ্যে প্রানের এই শক্তি আসে কোথা থেকে? মৃত্যুর পরেই বা সেই শক্তি কোথায় যায়? উত্তর কোথাও থেকে আসে না। আবার মৃত্যুর পরেও কোথাও যায় না। এটা প্রানেরই নিজস্ব ধর্ম। আগুনের ধর্ম যেমন সমস্ত কিছুকে পোড়ানো, অ্যাসিডের ধর্ম যেমন ধাতুকে গলানো, তেমনই। অ্যাসিডের এই যে ধাতুকে গলানোর ক্ষমতা, এই ক্ষমতা কোথা থেকে আসে? উত্তর এটা কোথাও থেকে আসার বা কোথাও যাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই এর মধ্যে। এটা অ্যাসিডেরই নিজস্ব ধর্ম। আগুনের এই যে সমস্ত কিছুকে পোড়ানোর যে শক্তি, সেই শক্তি কোথা থেকে আসে? আবার আগুন নিভিয়ে দিলেই বা সেই শক্তি যায় কোথায়? উত্তর কোথা থেকে আসেও না, কোথাও যায়ও না৷ পোড়ানোটাই আগুনের সহজাত ধর্ম৷ ঠিক তেমনি প্রাণেরও সহজাত ধর্মই হলো প্রাণের বিভিন্ন লক্ষন যথা চিন্তাভাবনা করা বা বিভিন্ন শারীরবৃত্তিয় কাজ পরিচালনা করা ইত্যাদি। প্রশ্ন উঠতে পারে সম্পুর্ন জড় উপাদান দিয়ে তৈরী প্রানীদেহে জড়বস্তুর বৈশিষ্ট্য বহির্ভূত প্রানের লক্ষন আসে কোথা থেকে? উত্তর, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন কোনোটার মধ্যেই যেমন জলের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, কিন্তু বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিশেষ অনুপাতে দুটিকে মেশালে তা থেকে জল তৈরী হয়, যার বৈশিষ্ট্য হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ন পৃথক, ঠিক তেমনি জড় উপাদান দিয়ে প্রাণ তৈরী হলেও তার বৈশিষ্ট্য জড় উপাদান থেকে পৃথক।
বৌদ্ধগ্রন্থ মিলিন্দ পঞহোতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নাগসেনের সাথে রাজা মিলিন্দের কথোপকথনের একটি বর্ণনা আছে, যাতে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে আত্মার অবিনশ্বর তত্ত্বের অসাড়তাকে।
মিলিন্দ- মৃত্যুর পরে আত্মা কোথায় যায়?
নাগসেন- কোথাও যায় না রাজন। দেহের সাথে সাথে তারও মৃত্যু ঘটে৷
রাজা মিলিন্দ সন্ধিগ্ন। সন্তুষ্ট নন এই উত্তরে।
নাগসেন বুঝতে পারেন রাজার মনোভাব। বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করেন- মহারাজ, বলতে পারেন, প্রদীপ নেভানোর পর আগুনের শিখা কোথায় যায়?
এবার রাজা মিলিন্দের ভুল ভাঙে। বুঝতে পারেন নাগসেনের তত্ত্বের যথার্থতা।
এরপরেও যারা গাঁইগুঁই করবেন আত্মার অস্তিত্ব নিয়ে, তাদের জন্য রইলো সরাসরি কিছু প্রশ্ন-
১) বিভিন্ন ধর্মে আত্মার বিভিন্ন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে৷ এতটাই পরষ্পরবিরোধী সেগুলি যে তার একটাকে মানতে গেলে বাতিল করতে হয় অন্যগুলো। এখন পৃথিবীর ৪২০০টা ধর্মের ৪২০০ রকম পৃথক পৃথক আত্মার বর্ণনার মধ্যে আপনি ঠিক কোনটিকে মানবেন ও কেন মানবেন? কিসের ভিত্তিতে মানবেন যে আপনার পছন্দের ওই ধর্মের বর্ণনাটাই ঠিক, বাকি সব ভুয়ো? কিভাবে প্রমান করবেন একমাত্র আপনার পছন্দের ধর্মের আত্মার বর্ণনাটাই ঠিক, বাকি সব ভুল? 'অন্ধবিশ্বাস' ছাড়া আর কোনো পথ আছে কি আপনার কাছে? না নেই। এবং মনে রাখবেন, বিজ্ঞানের কাছে কিন্তু কোনো বিশ্বাস বা কোনো তত্ত্বের বিন্দুমাত্র দাম নেই, যতক্ষন না সেই বিশ্বাসটি বা সেই তত্ত্বটির যথার্থতা 'প্রমানিত' হচ্ছে। 'প্রমান' বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানের কাছে। বিজ্ঞান বিশ্বাস করে যুক্তি ও প্রমানে। যুক্তি ও প্রমান ছাড়া বিজ্ঞানের দরবারে কোনো তত্ত্ব গ্রহনযোগ্য নয়, তার পিছনে যতবেশী মানুষেরই সমর্থন থাকুক না কেন বা যত বেশীদিন ধরেই সেই বিশ্বাসটি জনমানসে চলে আসুক না কেন।
২) যখন পৃথিবী তথা সৌরমন্ডলের জন্ম হয় নি, তখন আত্মাগুলি কী করছিলো? কোথায় ছিলো? যখন ব্রহ্মান্ডেরই জন্ম হয় নি, বিগ ব্যাং যখন সংগঠিত হয় নি, তখন কোথায় থাকতো আত্মারা? কী করতো তারা তখন?
৩) সৃষ্টির প্রথমে ছিলো মাত্র একটি প্রাণ৷ অর্থাৎ তার মধ্যে ছিলো মাত্র একটি আত্মা। অথচ আজ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যাই সাতশো কোটি৷ অনান্য প্রানী ও উদ্ভিদের কথা তো বাদই দিলাম। তাহলে এত প্রানীর মধ্যে এত আত্মা আসলো কোথা থেকে? ওই একটি আত্মা কী ভাগ হয়ে এতগুলো আত্মা হলো? কিন্তু ধর্মগ্রন্থ তো বলছে আত্মাকে কাটা যায় না। আবার আত্মা নাকি নতুন করে জন্মায়ও না বা তার মৃত্যুও হয় না৷ তাহলে এত জনসংখ্যা ও অনান্য প্রানীসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাখ্যা কী?
৪) হিন্দুধর্ম অনুযায়ী প্রতিটি প্রাণী নাকি তার পূর্বজন্মের কর্মফলে এ জন্মে পৃথিবীতে জন্মায়। অর্থাৎ পূর্বজন্মে ভালো কাজ করলে এ জন্মে ব্রাহ্মন বা পূর্বজন্মে খারাপ কাজ করলে এ জন্মে শূদ্র বা পোকামাকড় হয়ে জন্মায় ইত্যাদি। তা পুর্বজন্ম পূর্বজন্ম করে পিছাতে পিছাতে পৃথিবীতে প্রথম যে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিলো সেটি তার কোন পূর্বজন্মের কর্মফলে পৃথিবীতে এসেছিলো?
৫) পৃথিবীতে যখন প্রাণের উদ্ভব হয় নি, তখন আত্মাগুলো কোথায় স্তূপাকারে রাখা ছিলো? এই সৌরমন্ডলের মধ্যেই, না বাইরে কোথাও? সৌরমন্ডলের মধ্যে রাখা থাকলে ঠিক কোন জায়গায় রাখা ছিলো? বৃহস্পতি আর শনির মাঝে, নাকি মঙ্গল আর শুক্রের মাঝে? নাকি গ্রহানুপুঞ্জের মধ্যে? নাকি অন্য কোথাও? কিভাবে জানলেন ঠিক সেখানেই রাখা ছিলো?
৬) স্বর্গ ও নরক জায়গাগুলি ঠিক কোথায়? সেটি কি সৌরমন্ডলের মধ্যেই, নাকি বাইরে কোথাও? সৌরমন্ডলের মধ্যে হলে ঠিক কোন জায়গায়? বুধ আর মঙ্গলের মাঝখানে, নাকি ইউরেনাস আর নেপচুনের মাঝখানে? নাকি অন্য কোথাও? কারণ বিজ্ঞানীরা সৌরমন্ডলের মধ্যে এরকম কোনো জায়গার খোঁজ পান নি। সৌরমন্ডলের বাইরে হলেই বা ঠিক কোন জায়গায়? কিভাবে জানলেন ঠিক সেই জায়গাতেই স্বর্গ বা নরক আছে? গিয়ে দেখেছেন? শক্তিশালী দূরবীনের সাহায্যে আমরা এখন সৌরমন্ডলের বাইরেও কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের জিনিস দেখতে পাই। কিন্তু এখনও অবধি বিজ্ঞানীরা এরকম কোনো জায়গার খোঁজ পান নি যেটা ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত স্বর্গ বা নরক হতে পারে, যেখানে আত্মারা সব কিলবিল করছে। তাহলে স্বর্গ নরক জায়গাগুলি ঠিক কোথায়?
৭) হিন্দুধর্মে বলা হয়েছে আত্মাকে আগুনে পোড়ানো যায় না, অস্ত্রে বিদ্ধ করা যায় না, জলে ভেজানো যায় না, আবার এদিকে অনান্য ধর্মের মতো হিন্দুধর্মেও নরকে আত্মার শাস্তির বিভিন্ন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। একটু ভেবে দেখুন তো, যাকে আগুনে পোড়ানো যায় না, অস্ত্রে বিদ্ধ করা যায় না, তাকে আদৌ কোনো শাস্তি দেওয়া সম্ভব কিনা? এগুলো তো সম্পুর্ন স্ববিরোধী কথাবার্তা। কাজেই যদি আপনি গীতায় বর্ণিত আত্মাকে আগুনে না পোড়াতে পারার, অস্ত্রে বিদ্ধ না করতে পারার তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনাকে নরকে আত্মাকে শাস্তি দেবার তত্ত্বে অবিশ্বাস করতে হবে, আবার নরকে আত্মার শাস্তির তত্ত্বে বিশ্বাস করলে গীতায় দেওয়া আত্মার তত্ত্বে অবিশ্বাস করতে হবে। দুটো একসাথে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়৷ অথচ মুশকিল হলো হিন্দুধর্মে এই দুই পরস্পরবিরোধী কথা একইসাথে বলা হয়েছে।
কাজেই, এই দীর্ঘ আলোচনার শেষে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি আত্মা শুধুমাত্র একটি কুসংস্কার বিশেষ৷ দেহাতীত আত্মার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ আর আত্মার অস্তিত্ব নেই মানেই অস্তিত্ব নেই ভূতেরও।